ঠাকুরগাঁওয়ে চলছে দাবদাহ। আছে অসহনীয় লোডশেডিংও। তীব্র গরম আর লোডশেডিংয়ে যেন হাঁসফাঁস নেমেছে জনজীবনে। ফলে অনেকটা বাধ্য হয়েই ইলেক্ট্রনিক্সের শো-রুমগুলোর দিকে ছুটছে ক্রেতারা। যদিও গরম আর লোডশেডিং আর গরমের সুযোগকে কাজে লাগিয়ে চার্জার ফ্যানের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে শো-রুম ও ইলেক্ট্রনিক্সের দোকানগুলো।
জেলা শহরের ভিশন ও ওয়ালটনসহ ইলেকট্রনিক্সের বেশ কয়েকটি শো-রুমে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, শো-রুমগুলোতে নেই চার্জার ফ্যান। কয়েকটি দোকানে পাওয়া গেলেও দাম অনেক বেশি। এতে ভোগান্তিতে পড়তে হয়েছে ক্রেতাদের।
খালিদ হাসান নামে এক ক্রেতা বলেন, তিন দিন ধরে শহরের বিভিন্ন শো-রুমে চার্জার ফ্যান কেনার জন্য ঘুরছি, কিন্তু পাচ্ছি না। কিছু কিছু দোকানে পাওয়া গেলেও দাম নিচ্ছে কয়েকগুণ বেশি। আগে দিনে যেই ফ্যানের দাম ছিল ৩ হাজার টাকা, সেটা এখন ৫ হাজার টাকা। তাও পাওয়া যায় না। এ বিষয়ে প্রশাসনের মনিটরিং কামনা করছি।
শহরের আশ্রম পাড়ার মামুনুর রশিদ নামে আরেক ফ্যান ক্রেতা বলেন, আমি গত দুই দিন আগে ওয়ালটনের একটি চার্জার ফ্যান কিনেছি ৬ হাজার ১০০ টাকায়। তাদের শো-রুমে এই ফ্যানের স্টক শেষ হওয়ায় অন্য এক দোকানে কিনতে গেলে সেই ওয়ালটনের একই ফ্যানের দাম আমার কাছে চেয়েছে ৭ হাজার ৫০০ টাকা। দুই দিনের ব্যবধানে প্রায় দেড় হাজার টাকা বেশি। বেশিরভাগ দোকানে এসব ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। তাই দাম যাচাই করারও সুযোগ পাচ্ছি না। হঠাৎ করে কেন এই ফ্যানের সংকট দেখা দিলো তা জানা না থাকলেও মনে হচ্ছে ব্যবসায়ীরা বেশি মুনাফা অর্জনের জন্য সিন্ডিকেট করেছে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের ঠাকুরগাঁওয়ে বিদ্যুতের অবস্থা এমন হয়েছে যে রকেট যাওয়ার মতো। বিদ্যুৎ কখন আসে আর কখন যায় সেটা বোঝা যায় না। এদিকে প্রচণ্ড গরম, অন্যদিকে বিদ্যুতের অসহনীয় লোডশেডিং। সব মিলে পরিবারের বয়স্ক ও শিশুরা অসুস্থ হয়ে পড়ছেন। তাই উপায় না পেয়ে বাধ্য হয়ে বেশি দামে এসব ফ্যান কিনতে হচ্ছে।
মন্দিরপাড়া এলাকার জহিরুল ইসলাম বলেন, গরমে থাকা যাচ্ছে না। অসুস্থ হয়ে পড়েছি। তাই একটা চার্জার ফ্যান কিনতে গিয়েছিলাম। ৫ থেকে ৬টা দোকান ঘুরে একটাতে পেলাম। কিন্তু দাম চায় ৭ থেকে ৯ হাজার টাকা। এতো দামে ফ্যান কেনা সম্ভব না। তাই হতাশ হয়ে ফিরে এসেছি।
জেলা শহরের ভিশন এম্পোরিয়ামের ম্যানেজার লিটন রয় বলেন, চাহিদা বাড়ায় কয়েক দিন ধরে আমাদের শো-রুমে চার্জার ফ্যানের স্টক শেষ হয়ে গেছে। বিষয়টি কোম্পানিকে অবগত করে চাহিদা দেওয়া হয়েছে। হয়তো কয়েক দিনের মধ্যে ফ্যানগুলো এসে যাবে। তবে কোম্পানি ফ্যানের দাম বাড়ায়নি। আগে ১২ ইঞ্চি চার্জার ফ্যানের দাম ৪ হাজার ২০০ ও ১৪ ইঞ্চি ৫ হাজার টাকা ছিল এখনো সেই দাম-ই আছে।
ইলেকট্রনিক্সের দোকানদাররা বলছেন, চার্জার ফ্যানের স্টক সীমিত হওয়ায় ও বড় বড় ডিলারদের কাছে বেশি দামে ফ্যান কিনতে হচ্ছে তাই খুচরা বাজারে ফ্যান প্রতি ১ থেকে ২ হাজার টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
আব্দুর রহমান মোনাম নামে শহরের এক সাধারণ ডিলার ও ইলেক্ট্রনিক্স ব্যবসায়ী বলেন, গরমে মৌসুমে চার্জার ফ্যান মাত্র ৪০ থেকে ৫০ পিস আনি। এবার হঠাৎ করে তাপমাত্রা বেড়ে যাওয়ায় ও ঘনঘন লোডশেডিংয়ের কারণে এসব ফ্যানের চাহিদা বাড়ায় ফ্যানের স্টক দ্রুত শেষ হয়ে যায়। বিভিন্ন কোম্পানির শো-রুমগুলোতেও এগুলো ফ্যান পাওয়া যাচ্ছে না। তাই ক্রেতাদের চাহিদার জন্য আমার যখন বড় বড় ডিলারদের কাছে ফ্যান কিনতে গেলে তারা আমাদের কাছে দাম বেশি নিচ্ছেন। তাই খুচরা বাজারে ফ্যান প্রতি এক থেকে ২ হাজার টাকা দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
গরম ও লোডশেডিংকে পুঁজি করে কিছু কিছু অসাধু ব্যবসায়ী চার্জার ফ্যানের দাম বৃদ্ধির অভিযোগ আমাদের কাছে এসেছে। আমাদের মনিটরিং কার্যক্রম অব্যাহত আছে। ফ্যানের সংকট ও দাম বৃদ্ধির বিষয়টিও মনিটরিং করে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে বলে ঢাকা মেইলকে জানান, জেলার জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক মো. শেখ সাদী।
এসএস