আমন ধানে পোকার আক্রমণ, আশ্বিনের বৃষ্টিতে স্বস্তি
চলতি আমন মৌসুমের প্রথম দিকে অতি খরায় ঠাকুরগাঁওয়ের কৃষকরা ধান উৎপাদন নিয়ে দিশেহারা ও চিন্তাগ্রস্থ হয়ে পড়লেও আশ্বিনের বৃষ্টিতে স্বস্তি ফিরে পেয়েছেন। কিন্তু এখন বিভিন্ন পোকার আক্রমণে ফলন নিয়ে শঙ্কিত চাষীরা।
যদিও কৃষি বিভাগ বলছেন, বিক্ষিপ্তভাবে হওয়া ধানের রোগ ও পোকার আক্রমণ তেমন কোনো ক্ষতি হবে না। এবিষয়ে কৃষকদের পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। অন্যদিকে কৃষকদের অভিযোগ মাঠ পর্যায়ে পরামর্শ না পাওয়ার।
সরজমিনে জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, আমন ধান রোপনের শুরু থেকে মাঝামাঝি সময় প্রাকৃতিকভাবে তেমন বৃষ্টি না হওয়ায়। খরায় ধান গাছ শুকিয়ে যাওয়াসহ সেচ ব্যবস্থার অভাবে ধান চাষে দিশেহারা হয়ে পড়েছিলেন জেলার কৃষকরা।
তবে আশ্বিন মাসের ৯ তারিখ থেকে ১২ তারিখ পর্যন্ত ৪৮ ঘণ্টায় জেলায় ৪১৪ দশমিক ৫ মিলিমিটার বৃষ্টি হওয়ায় স্বস্তি ও ধান গাছের প্রাণ ফিরে পেলেও এখন সরা পচা রোগ, মাজরা পোকা, ধানের শীষ কাটা পোকা,পাতা মোড়ানো পোকাসহ বিভিন্ন পোকার আক্রমণে কাঙ্খিত ফলন নিয়ে শঙ্কায় কৃষকরা।
কৃষকরা বলছেন, অতি খরায় শ্যালো মেশিনের সেচ দিয়ে ধান রোপন করে খুব দুশ্চিন্তায় থাকতে হয়েছে আমাদের। এখন বৃষ্টি হওয়াতে কিছুটা স্বস্তি আসলেও রোগবালাই ও পোকার আক্রমণে চিন্তিত ও কীটনাশক প্রয়োগেও তেমন সুফল মিলছে না। এবিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে ঠিকভাবে পরামর্শও পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের।
কৃষি বিভাগের কর্মকর্তার দেওয়া তথ্য মতে, জেলায় এবছর আমন ধান চাষের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ১ লাখ ৩৭ হাজার ২৬০ হেক্টর জমি। লক্ষ্যমাত্রার থেকেও ২০ হেক্টর বেশি জমিতে আমন ধান চাষ হয়েছে। এতে ৪ লাখ ৮০ হাজার মেট্রিক টন ধান উৎপাদনের সম্ভবনা রয়েছে।
সদর উপজেলার কৃষক মোফাজ্জল বলেন, আমরা শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে ধান লাগিয়েছি। খরার তাহেনে ধানের মরমর অবস্থা হইছিল। কয়েকদিন ধরে পানি হওয়াতে ভালো হইছে কিন্তু এখন পোকার ধরিছে খুব। পোকায় ধান গাছ কাটে শেষ করে দেছে। পাতা আর শীষলা সাদা হই যাছে। এই গুলোর জন্য আমরা খুব চিন্তায় আছি।
জানতে চাইলে তিনি অভিযোগ করে বলেন, কৃষি অধিদফতর থেকে কোন প্রকার পরামর্শ পাইনি। আমরা যে বেলা থেকে আবাদ করছি সেই বেলা থেকে কোন কিছুই পাই না।
তোফাজ্জুল নামে কৃষক বলেন, আমি এবার ৩০ বিঘা জমিতে ধান লাগিয়েছি। সব শ্যালো মেশিনের পানি দিয়ে। প্রথম দিকে ধানের আবাদ নিয়ে খুব চিন্তায় ছিলাম। বর্তমানে মেঘের পানি হওয়াতে গাছের অবস্থা ভালো। তবে মাজরা পোকার সমস্যা। এই পোকা ধানে নকা কাটে দিচ্ছে। পাতা কুকড়ায় আনতেছে। আগে পুরো মৌসুমে এক দুই বার বিষ দিলেও হইতো। এখন প্রায় প্রতি সপ্তাহে বিষ দিতে হচ্ছে।
পীরগঞ্জ উপজেলার ধান চাষী রুহুল আমিন বলেন, এবার হামার এদিকে ধান ক্ষেতে শীষ কাটা, পাতা মুড়ানো সহ বিভিন্ন পোকামাকড়ের খুব অত্যাচার। দুই তিনবার করে অনেক বিষ দেছি কিন্তু কাম হওয়া না। তবে আশ্বিন মাসের বৃষ্টির হওয়ার কারণে কিছুটা লাভবান হবো মনে হয় আল্লাহর রহমতে।
একই উপজেলার ভোমরাদহ চিলাছাপা গ্রামের কৃষক ইউসুফ আলী বলেন, কিছু দিন আগে এমন খরা ছিল। ধানের গাছ মরে যাচ্ছিল। আল্লাহর রহমতে ৪-৫ দিনের পানিতে খুব উপকার হয়েছে ও স্বস্তি পাচ্ছি আমরা। তবে পোকার আক্রমণ এখনো আছে। তাই কয়েক দিন পর পর কীটনাশক স্প্রে করতে হচ্ছে। তাতে খরচ বাড়ছে আমাদের।এছাড়াও জেলার অন্যান্য উপজেলার কৃষকরাও একই কথা জানান।
জেলা পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. গোলাম যাকারিয়া জানান, ২৭ সেপ্টেম্বর থেকে গত ৪৮ ঘটনায় জেলায় ৪১৪.৫ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে।
রোগবালাই ও পোকার উপদ্রব দমনের বিষয়ে কৃষকদের কারিগরি পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপফরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, জেলায় বিভিন্ন জায়গায় বিক্ষিপ্তভাবে ধান ক্ষেতে পোকার যে আক্রমণ দেখা দিয়েছে তা অর্থনৈতিক ক্ষতির নিচে রয়েছে। এবিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে আলোকফাঁদ কার্যক্রম ও পাচঁটি উপজেলায় সার্ভিলেন্সসহ বিভিন্ন কার্যক্রম অব্যাহত আছে।
এছাড়াও পোকা দমনে ধান ক্ষেতে কোঞ্চি স্থাপন করে পাখি বসার ব্যবস্থা করা, ধান গাছের পাতায় মাজরা পোকার ডিম দেখলে পাতা ছিলে সেগুলো পায়ে পিশে মারা, হাতের জাল দিয়ে পোকা দমনে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। জেলায় এখন পর্যন্ত ধানের ফসল ভালো অবস্থানে আছে। আশা করছি এবারও আমন ধানের ফলন খুব ভালো হবে।
আরকেএম/আরকে