মালচিং পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজে স্বপ্ন বুনছেন কৃষক
ঠাকুরগাঁওয়ে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ হচ্ছে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ। চারা রোপণের মাত্র ৫০-৫৫ দিনে ফলন পাওয়ায় আর বাজার চাহিদা বেশি থাকায় এই পদ্ধতিতে বেড়েছে তরমুজ চাষের পরিধি। খরচের তুলনায় বেশি লাভবান হওয়াতে এই তরমুজ চাষে স্থানীয় কৃষকরা সফলতার স্বপ্ন বুনছেন।
সাধারণত জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত তরমুজ চাষের উপযোগী সময় হলেও আগস্ট থেকে সেপ্টেম্বর মাসে মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় তরমুজ চাষ করা হয়।
সরেজমিনে দেখা যায়, ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামের উদ্যমী যুবক কৃষক মো. মঞ্জুর আলম, মো. আজিমুল হক, লুৎফর রহমান ও সালাউদ্দিন আহমেদ সাড়ে পাঁচ একর জমি লিজ নিয়ে মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করেছেন ব্ল্যাক বেবী নামের তরমুজ। এ পদ্ধতিতে গ্রীষ্মকালীন তরমুজ চাষে চারা রোপণের মাত্র ৫০-৫৫ দিনে ফলন পাওয়া যায়। এসব তরমুজ সুস্বাদু হওয়ায় এর বাজার চাহিদাও বেশি। এ কারণে খরচের তুলনায় বেশি লাভবান হচ্ছেন তারা।
এই কৃষকরা জানান, এখানকার উৎপাদিত একেকটি তরমুজের ওজন প্রায় ২ থেকে ৪ কেজি। আর এসব তরমুজ স্থানীয় বাজারসহ যাচ্ছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে। তাদের এমন সফলতা দেখে আশেপাশের স্থানীয় কৃষকসহ অন্যান্য জেলার কৃষকরাও আগ্রহী হচ্ছেন মালচিং পদ্ধতিতে মাচায় তরমুজ চাষে।
স্থানীয় কৃষক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, এভাবে আগাম তরমুজ চাষ করে এলাকার মঞ্জুর, আজিমুলসহ আরও অনেকে লাভবান হচ্ছেন। এর আগেরও তারা বেশ কয়েকজন মিলে এই জাতের তরমুজ চাষ করেছিলেন। এবারও করেছেন। আগামীতে আমরাও এভাবে তরমুজ চাষ করার চিন্তা করছি।
তাসনিম আলম লাবিব বলেন, মঞ্জুর চাচা আমাদের এইদিকে আধুনিক পদ্ধতিতে তরমুজ চাষ করেছেন। আমরা দেখছি, তিনি খরচের তুলনায় ভালো লাভবান হচ্ছেন। আগামীতে আমরাও এভাবে তরমুজ চাষ করবো।
হুসেইন মুহাম্মদ নিরব নামে এক কৃষি উদ্যোক্তা বলেন, এখানে কিভাবে বিদেশি জাতের তরমুজ চাষ করা হচ্ছে— তা দেখতে আসলাম। দেখে খুব ভালো লাগল। অনেক ফল ধরেছে। আগামীতে আমিও এভাবে তরমুজ চাষ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
পীরগঞ্জ উপজেলার শিমুলবাড়ি গ্রামের কৃষি উদ্যোক্তা মো. মঞ্জুর আলম জানান, গতবছর এভাবে তরমুজ চাষ করে লাভবান হওয়ায় এবছরও তিনি চাষ করেছেন। মালচিং পদ্ধতিতে চাষের ফলে অতি বৃষ্টি ও খড়া থেকে রক্ষা সহজে পাওয়া যায়। এছাড়া এতে গাছের রোগবালাইও কম হয়। এছাড়াও মাটিতে চাষ করা তরমুজের তুলনায় মাচায় চাষ করা তরমুজ বেশি সুস্বাদু ও মিষ্ট হয়। ইতোমধ্যে দের একর জমির ফল প্রথম হারভেস্টেই দুই লাখ টাকা বিক্রয় করেছেন তিনি। দ্বিতীয়বারে আরও একলাখ টাকার তরমুজ বিক্রয়ের আশা করছেন।
একই গ্রামের আরেক কৃষি উদ্যোক্তা মো. আজিমুল হক ঢাকা মেইলকে বলেন, আমরা চারজন মিলে প্রায় সাড়ে ৫ একর জমিতে ব্ল্যাক বেবী জাতের তরমুজ মালচিং পদ্ধতিতে চাষ করেছি। এই পদ্ধতিতে খরচের তুলনায় লাভ বেশি হয়। একেকটি তরমুজ ২-৪ কেজি পর্যন্ত ওজন হয়। বর্তমানে প্রতি কেজি ৩০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এখানকার উৎপাদিত এসব ফল স্থানীয় বাজারসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলের বাজারে যাচ্ছে। এবার সাড়ে ৫ একর জমির তরমুজে প্রায় ৭-৮ লাখ টাকা লাভবান হওয়ার আশা করছি। আর সব মিলিয়ে খরচ হবে প্রায় ৪ লাখ টাকা।
জেলা কৃষি বিভাগের কর্মকর্তা দেওয়া তথ্য মতে, ২০২১ সালে মালচিং পদ্ধতিতে জেলায় মাত্র ৩ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছিল বিদেশি জাতের এসব তরমুজ। ২০২৪ সালে এর চাষ বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়িয়েছে ২২ হেক্টরে। লাভ বেশি থাকায় মাত্র তিন বছরের ব্যবধানে প্রায় সাত গুণ চাষ বৃদ্ধি পেয়েছে ১৯ হেক্টর জমিতে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ঠাকুরগাঁওয়ে মূলত ব্ল্যাক বেবী-১, ব্ল্যাক বেবী-২, সুইট ব্ল্যাক বেবী, অনুভব ও মেহেরুন কিং জাতের গ্রীষ্মকালীন বিদেশি জাতের তরমুজ উল্লেখযোগ্য হারে চাষ হচ্ছে। আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া কৃষকরা এসব তরমুজ চাষে ঝুঁকছেন ও আবাদ সম্প্রসারিত হচ্ছে। এবিষয়ে কৃষি বিভাগের পক্ষ থেকে কারিগরি সহায়তাসহ পরামর্শ প্রদান করা হচ্ছে। আগামীতে এর চাষ আরও বাড়বে বলেও জানান এই কর্মকর্তা।
আরকেএম/আরকে